Header Ads

Header ADS

সন্দ্বীপের ইতিহাস

সন্দ্বীপের ইতিহাস

সন্দ্বীপের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন মতামত শোনা যায়। কারও কারও মতে বার আউলিয়ারা চট্টগ্রাম যাত্রার সময় এই দ্বীপটি জনমানুষহীন অবস্থায় আবিস্কার করেন এবং নামকরণ করেন শুণ্যদ্বীপ, যা পরবর্তীতেসন্দ্বীপে রুপ নেয়। ইতিহাসবেত্তা বেভারিজের মতে চন্দ্র দেবতা সোম এর নামানুসারে এই এলাকার নাম সোম দ্বীপ হয়েছিল যা পরবর্তীতেসন্দ্বীপে রুপ নেয়।
কেউ কেউ দ্বীপের উর্বরতা ও প্রাচুর্যের কারণে দ্বীপটিকে স্বর্ণদ্বীপ আখ্যা প্রদান করেন। উক্ত স্বর্ণদ্বীপ হতে সন্দ্বীপ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলেও ধারণা করা হয়। দ্বীপের নামকরণের আরেকটি মত হচ্ছে পাশ্চাত্য ইউরোপীয় জাতিগণ বাংলাদেশে আগমনের সময় দূর থেকে দেখে এই দ্বীপকে বালির স্তুপ বা তাদের ভাষায়স্যান্ড-হীপ (Sand-Heap) নামে অভিহিত করেন এবং তা থেকে বর্তমান সন্দ্বীপ নামের উৎপত্তি হয়।
ইউরোপীয়দের লেখা ইতিহাসে জানা যায় যে সন্দ্বীপে প্রায় তিন হাজার বছরের অধিককাল ধরে লোক বসতি বিদ্যমান। এমনকি এককালে এর সাথে সংযুক্ত থাকা নোয়াখালীতে মানুষের বসতি স্থাপনের পূর্বেই সন্দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। সন্দ্বীপের লবণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও বস্ত্র শিল্প পৃথিবী খ্যাত ছিল। উপমহাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা এই অঞ্চলে এসে তাদের জাহাজ নোঙ্গর করতেন এবং সহজ বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং পরিবহন সুবিধাদি থাকায় এই অঞ্চলে ব্যবসা এবং বসতি স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। ১৭৭৬ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি বছর সন্দ্বীপে উৎপাদিত প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার মণ লবণ, তিনশ জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হত।
সন্দ্বীপ এককালে কম খরচে মজবুত ও সুন্দর জাহাজ নির্মানের জন্য পৃথিবী খ্যাত ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় এই জাহাজ রপ্তানি করা হতো। তুরস্কের সুলতান এই এলাকার জাহাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখান থেকে বেশ কিছু জাহাজ কিনে নেন।ভারতবর্ষের মধ্যে সন্দ্বীপ ছিল একটি সমৃদ্ধশালী বন্দর। লবণ ও জাহাজ ব্যবসা, শস্য সম্পদ ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে পর্তুগিজরা সন্দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করেন।এছাড়া ভ্রমণ ও ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ফরাসি ও ওলোন্দাজ পরিব্রাজকরা প্রায়ই সন্দ্বীপে আগমন করতেন।১৬১৫ সালে পর্তুগিজদের সাথে আরকান রাজ্যের যুদ্ধে ২০০ জন সৈন্য সহ পর্তুগীজ সেনাপতি ইমানুয়েল মার্তুস নিহত হয় এবং পর্তুগিজরা সন্দ্বীপ ত্যাগ করলে ১৬১৬ সালে মগরাজ সন্দ্বীপ দখল করে।
এরপর সন্দ্বীপে আরকান ও মগদের প্রাধান্য থাকলেও তাদের পরাধীনতাকে অস্বীকার করে একে প্রায় অর্ধ শতাব্দী শাসন করেন দেলোয়ার খাঁ। ১৬৬৬ সালে তাঁর রাজত্বের পতন ঘটে এবং মোগল সরকারের অধীনে জমিদারদারী প্রথার সূচনা ঘটে, যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজত্বের অবসানের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়।
রূপে মুগ্ধ হয়ে যুগে যুগে অনেক কবি, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, পর্যটক এসেছেন এখানে। ১৩৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে বতুতা সন্দ্বীপে আসেন।১৫৬৫ সালে ডেনিশ পর্যটক সিজার ফ্রেডরিক সন্দ্বীপে আসেন এবং এর বহু প্রাচীন নিদর্শনের বর্ননা লিপিবদ্ধ করেন।১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী মোজাফ্‌ফর আহমেদের সাথে সন্দ্বীপে আসেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
সন্দ্বীপ ভ্রমণের সময়কার স্মৃতির পটভূমিকাতেইকাজী নজরুল ইসলাম তাঁর মধুবালা গীতিনাট্য রচনা করেন। সন্দ্বীপে বৃক্ষের ছায়াতলে বসে নজরুল তাঁর চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের অনেকগুলো কবিতা রচনা করেন।
এ উপজেলায় ১৭৬৭ সালে আবু তোরাবের নেতৃত্বে বাংলার প্রথম কৃষক-বিদ্রোহ এবং ১৯৩০ সালে কংগ্রেস সভাপতি কালী কেশব ঘোষের নেতৃত্বে আইন অমান্য-আন্দোলন সংঘটিত হয়।১৯৭১ সালে এ উপজেলা ১নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১০ মে পাকবাহিনী সন্দ্বীপ শহরে আইনজীবী জাহেদুর রহমানসহ অনেক নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করে এবং অনেক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও লুটপাট করে। ৭ ডিসেম্বর সন্দ্বীপ শত্রুমুক্ত হয়।
(Collected)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.